লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন আলোচিত সীমান্ত এলাকা ভারত নিয়ন্ত্রিত ঐতিহাসিক তিনবিঘা করিডোর। যে করিডোর পেরিয়ে বাংলাদেশের আর একটি ইউনিয়ন যার নাম দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। করিডোরের দু’পাশে রয়েছে বিজিবির চেকপোস্ট। চোরাচালান রোধ, সীমানা পাহাড়াসহ নানান অপরাধ দমনে সতর্ক অবস্থানে থাকলেও কৌশলে পার হয়ে বাংলাদেশে আসছে ভারতীয় গরুসহ চোরাচালানের যাবতীয় পণ্য। বহুদিন ধরে দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দারা এসব চোরাচালান সিন্ডিকেটের কবলে আটকে আছে। ফলে নিজের পোষা গরুও বিক্রি করতে পড়তে হয় নানা টালবাহানায়। রয়েছে স্লিপ বাণিজ্য, ভারতীয় পণ্য অবাধে প্রবেশসহ অসংখ্য অভিযোগ। মূলত এ সকল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে এই ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ভারতীয় চিনি দিয়ে মানহীন মিষ্টি তৈরীর একাধিক কারখানা। আর এসব মিষ্টি চলে যাচ্ছে পাটগ্রাম উপজেলা ছাড়িয়ে অন্যান্য এলাকাতেও। পাইকারি মূল্যে সস্তা হওয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এসব মিষ্টি।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কারখানার মালিকেরা বিজিবি চেকপোস্টে নামমাত্র দেশীয় চিনি দেখিয়ে বেশিরভাগ ভারতীয় চিনি চোরাচালান পথে এনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীনভাবে তৈরী করে আবার বিজিবি চেকপোস্ট দিয়েই মানুষের মতোই অবাধে পার হয়ে চলে যাচ্ছে নানা জায়গায়।
ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে রয়েছে মশিউর রহমান সাজুর সাথী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও আমির হোসেনের ভাই-বোন মিষ্টান্ন। একই ইউনিয়নের বঙ্গেরবাড়িতে রয়েছে রেজাউল করিমের বিসমিল্লাহ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কারিগর ছাড়া কোনো মালিককে পাওয়া যায়নি।
ফোনালাপে বিসমিল্লার মালিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা দেশীয় চিনি দিয়ে তৈরী করি। কিন্তু তার কারখানায় গিয়ে ভারতীয় চিনির বস্তা সহকারে পাওয়ার কথা জানালে তিনি তা মানতে নারাজ।
জানা যায়, চিনির সহজলভ্যতায় পাইকারিভাবে ক্রয় করে লাভবান সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাই তা সহজে ক্রেতাদের কাছেও বিক্রি করছে বাজারের ভালো মিষ্টির তুলনায় একটু কম দামে। কিন্তু মিষ্টি তৈরীর পরিবেশ, ফ্রিজে পঁচা মিষ্টি জমিয়ে রাখা, নামকাওয়াস্তে দেশীয় চিনির কথা বলে অনেক বেশি পরিবহন ব্যয় করে কিভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে এ সময় সাথী মিষ্টান্নের কারিগর নিজে মানহীন মিষ্টির কথা স্বীকার করে বলেন, ১৬০ টাকা পাইকারি নিয়ে গিয়ে এই মিষ্টিই ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অনিয়ম হতে দেওয়া যাবে না। এগুলোত মানুষ খাবে। কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, বিষয়টি আমি দেখছি।
তবে করিডোর সংযুক্ত বিজিবির পানবাড়ি ৫১ কোম্পানি কমান্ডার নজরুল ইসলাম জানান, দেশীয় চিনি নিয়ে গেলে সেটা রেজিস্ট্রারে লিখে রাখা হয়।
ভারতীয় চিনি এসব কারখানায় পাওয়া গিয়েছে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কারও কারখানা বন্ধ রাখতে পারি না। এটার জন্য আমি দায়ি নয় ভোক্তা অধিকার আছে।
তবে ভোক্তারা মনে করছেন, এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরীকৃত মানহীন মিষ্টি খেয়ে মানুষের ক্ষতি হতে পারে। তাই দ্রুত দহগ্রামসহ উপজেলার অন্যান্য কারখানাগুলোতেও ভোক্তা অধিকার আইনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।